সুসং দুর্গাপুরে যা যা দেখবেনঃ

সুসং দুর্গাপুরে যা যা দেখবেনঃ

সোমেশ্বরী নদী 
দুর্গাপুরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে অসামান্য সুন্দর এ নদী। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড় থেকে সৃষ্ট এ নদী মেঘালয়ের বাঘমারা বাজার হয়ে রানিখং পাহাড়ের পাশ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। জনশ্রুতি আছে সোমেশ্বর পাঠক নামে এক সিদ্ধপুরুষ এ অঞ্চলের দখল নেওয়ার পর থেকে নদীটি সোমেশ্বরী নাম লাভ করে। ১৯৮৮ সালে পাহাড়ীয়া ঢলে আতরাখালী নামে সোমেশ্বরী নদীর একটি শাখা নদীর সৃষ্টি হয়। সুসঙ্গ দুর্গাপুর বাজারের উত্তর দিক দিয়ে সোমেশ্বরী নদী থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়েছে আতরাখালী নদীটি।

ছবির মতোই নদী- সোমেশ্বরী। অদূরে মেঘালয়ের গারো পাহাড়শ্রেণী।
সুসং দুর্গাপুরের জমিদার বাড়ি
জেলার দুর্গাপুর উপজেলায় অবস্থিত সুসং দুর্গাপুরের জমিদার বাড়ি। সুসং দুর্গাপুরের সোমেশ্বর পাঠকের বংশধররা এ বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। বাংলা ১৩০৪ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে জমিদার বাড়িটি একেবারে ধ্বংস হয়ে গেলে তাদের বংশধররা এটি পুনঃনির্মাণ করেন।

সুসং রাজবাড়ীটির একাংশ এখন উপজেলার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
টংক আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ
১৯৪৬-৫০ সালে কমরেড মণিসিংহের নেতৃত্বে পরিচালিত টংক আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ। সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে কিছ দূর এগোলেই চোখে পড়বে এ স্মৃতিসৌধটি। প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বর কমরেড মণিসিংহের মৃত্যু দিবসে এখানে তিন দিনব্যাপী মণি মেলা নামে লোকজ মেলা বসে।
সাধু যোসেফের ধর্মপল্লী
সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে যেতে হয় রানিখং গ্রামে। এখানে আছে সাধু যোসেফের ধর্মপল্লী। রানিখং গ্রামের এ ক্যাথলিক গির্জাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯১২ সালে।

সাধু যোসেফের ধর্মপল্লী, রাণীখং
রাশমণি স্মৃতিসৌধ
রানিখং থেকে বিজয়পুর পাহাড়ে যাওয়ার পথে বহেরাতলীতে অবস্থিত রাশমণি স্মৃতিসৌধ। ১৯৪৬ সালের ৩১ জানুয়ারি সংঘটিত কৃষক ও টংক আন্দোলনের প্রথম শহীদ ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের নেত্রী হাজং মাতা রাশমণির স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে রাশমণি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এখানে নির্মাণ করেছে এ স্মৃতিসৌধটি।

হাজংমাতা রাশমণি স্মৃতিসৌধ
বিজয়পুর পাহাড়
রাশমণি স্মৃতিসৌধ থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বিজয়পুরে আছে বাংলাদেশের একমাত্র চীনা মাটির পাহাড়। এই পাহাড্রের মাটির রঙ সাদা থেকে হালকা গোলাপি। এই মাটি সিরামিকের জিনিসপত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। মাটি সংগ্রহের উদ্দ্যেশ্যে পাহাড় খননের ফলে এখানে তৈরি হয়েছে জলাধার। এই জলাধারের পানি একেবারে স্বচ্ছ নীল।

বিজয়পুর চিনামাটির পাহাড় এবং স্বচ্ছ নীল জলাধার।
বিরিশিরি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমী ও জাদুঘর
এখানে আদিবাসীদের ভাষা, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি চর্চা ও সংরক্ষণ করা হয়। সারা বছরব্যাপী এখানে বিভিন্ন উপজাতীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়ে থাকে। এখানে একটি জাদুঘর আছে যেখানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক নিদর্শন সংরক্ষিত আছে।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমী ও জাদুঘর, বিরিশিরি।
বিজয়পুর বিজিবি ক্যাম্প পাহাড়    
এটিও দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুরেই। এই পাহাড়ের চুড়া থেকে প্রমত্তা সোমেশ্বরীর চমৎকার সৌন্দর্য চোখে পড়ে।

বিজয়পুর বিজিবি ক্যাম্প পাহাড় যেখানে দিগন্ত মিলেছে সোমেশ্বরী নদীতে।
কমলা রাণী দিঘী
দুর্গাপুরের পার্শ্ববর্তী বিরিশিরি ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই কমলা রাণীর দিঘী। এই কমলা রাণীর দিঘী সাগর দিঘী নামেও পরিচিত। দিঘীটি পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেলেও এর দক্ষিণ পশ্চিম পাড় এখনও কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে। এই দিঘী নিয়ে অনেক পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত আছে।

কমলা রানীর দিঘী। দিঘীর কোন চিহ্ন এখন আর নেই কিন্তু এটির কাহিনী এখনো বিস্ময় জাগায়।
সুসং দুর্গাপুর কিভাবে যাবেন
ঢাকার মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সরাসরি দুর্গাপুর যাওয়ার বাস ছাড়ে। এ পথে চলাচলকারী দু'একটি বাস সার্ভিস হলো BRTC, সরকার, জিনাত ইত্যাদি। ভাড়া ২৫০-২৮০ টাকা।এছাড়া বাসে ময়মনসিংহ গিয়ে সেখান থেকে টেক্সি বা মাইক্রোবাস ভাড়া করেও দুর্গাপুর- বিরিশিরি যাওয়া যায়। মহাখালী থেকে ময়মনসিংহের সবচেয়ে ভাল বাসের নাম হল ‘এনা’। ভাড়া ২২০ টাকা। বিরিশিরি হতে বিজয়পুর চীনামাটির পাহাড়, রানীখং মিশন ইত্যাদি দেখতে চাইলে সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে মোটর সাইকেল বা রিকশা ভাড়া নিয়ে যেতে হবে। তবে যাতায়াত ব্যবস্থা বেশ দুর্গম।
কোথায় থাকবেনঃ
দুর্গাপুরে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা হলো ইয়ুথ মেন খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াইএমসিএ-এর রেস্ট হাউস। এখানকার কক্ষ ভাড়া ৩০০-৫০০ টাকা। যোগাযোগ :০১৭১৬২৭৭৬৩৭, ০১৮১৮৬১৩৮৯৬। এ ছাড়া আছে ইয়ুথ ওমেন খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াইডব্লিউসিএ পরিচালিত আরেকটি রেস্ট হাউস। এখানকার কক্ষ ভাড়া ৩০০-৬০০ টাকা। যোগাযোগ :০১৭১১০২৭৯০১, ০১৭১২০৪২৯১৬। এ ছাড়া দুর্গাপুরে সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। স্বর্ণা গেস্ট হাউস (০১৭২৮৪৩৮৭১২), হোটেল সুসং (০১৯১৪৭৯১২৫৪), হোটেল গুলশান (০১৭১১১৫০৮০৭) ইত্যাদি। এসব হোটেলে ১৫০-৪০০ টাকায় থাকার ব্যবস্থা আছে।

Comments